80s toys - Atari. I still have
Blog
ভোলার মুক্তিযুদ্ধ
Farzul 1308691241 21-20
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভোলা ছিল বরিশালের অধীন একটি মহকুমা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও পাক হানাদার বাহিনী নিঃসংশ নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভোলা ছিল ৯ নং সেক্টরের অধীন। এখানে মুক্তিবাহিনীর মোট ৪৮ টি ক্যাম্প ছিল।
প্রথম পতাকা উত্তোলনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের সাথে সংগতি রেখে ২ রা মার্চ তৎকালীন ভোলা কালেক্টরট ভবনে (বর্তমান ডিসি অফিসে) ছাত্র-জনতা আনুষ্ঠানিকভাবে. স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল করে ভোলা কালেক্টরট ভবনের সামনে সমবেত হয়। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রনেতা শাহজাহান গোলদার, মুজিবর রহমান মুজিব, ফজলুল কাদের মজনু, আব্দুল মমিন টুলু, রফিকুল ইসলাম, শাহজাহান মিলনসহ আরো অনেকে।
ভোলার দর্জি গোলাম মাওলা এ পতাকাটি তৈরি করেন। ছাত্র নেতা ফজলুল কাদের মজনু ভোলা কালেক্টরট ভবনের ছাদে উঠে, পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে. দিলে আরেক ছাত্রনেতা শাহজাহান মিলন তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর ছাত্র নেতা ফজলুল কাদের মজনু ভোলা কালেক্টরট ভবনের ছাদে (সমগ্র ভোলা অঞ্চলে প্রথম) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় মাইকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।

পাকবাহিনীর ভোলায় প্রবেশঃ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার পূর্ব থেকেই ভোলায় শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন ও প্রস্তুতি। অন্যদিকে পাকবাহিনীর সহায়তা নিয়ে রাজাকার-আলবদর বাহিনীও নিজেদের গঠন করতে শুরু করে। ৩রা মে পাকবাহিনী নদী পথে, খেয়াঘাট হয়ে ভোলায় আসে। তারা ওয়াপদা কলোনীতে, ক্যাম্প তৈরি করে। সেসময় ইসলামি ছাত্র সংঘের(বর্তমান ছাত্রশিবির) কিছু তরুনদের নিয়ে গঠন করে আলবদর-আলশামস বাহিনী। ভোলায় ইলিয়াস মিয়ার নেতৃত্বে গঠন করা হয় শান্তিকমিটি। সেসময় পাকবাহিনীর দোসর আবদুল্লাহ মৌলভী ছিলেন এ অঞ্চলের রাজাকার প্রধান।ভোলার মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন, কমান্ডার গাজী জয়নাল আবেদিন, হাই কমান্ড সিদ্দিকুর রহমান, কমান্ডার মাহবুব আলম শিশুভাই, আলী আকবর বড় ভাই, সুবেদার হযরত আলীসহ আর অনেকে।
ভোলায় পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় বহু ঘর-বাড়িতে হামলা চালায়। সেখানে তারা গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারী ধর্ষনের মত নানা অমানবিক ঘটনা ঘটায়।

দেউলা যুদ্ধঃ২২ শে অক্টোবর ১৯৭১, পাকবাহিনী বেতুয়া খাল ও তেঁতুলিয়া নদী হয়ে. বোরহানুদ্দিনের দেউলা গ্রামে ঢুকে ঐ গ্রামে প্রচন্ড তান্ডব চালায়। পুরিয়ে দেয় গ্রামের আঁশিটিরও বেশি বাড়ি-ঘর। সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেউলা দিঘিরপাড় নামক এলাকায় পাকসেনাদের আক্রমন করেন। সারাদিন তাদের যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৬৪ জনের মত পাকসেনা নিহত হয়। বাকী কয়েকজন পাকসেনা, পালিয়ে আসে ভোলা শহরে।

টনির/ঘুইংগার হাট যুদ্ধঃটনি মুন্সি নামে নোয়াখালীর এক লোক ভোলা শহর থেকে প্রায় ৭ মাইল দূরে মূল সড়কের পাশেই একটি বাড়ি তৈরি করে বসবাস করত। এরপর সেখানে একটি হাট বসতে শুরু করে যার নাম হয় টনির হাট। আনসার এডজুটেন্ট আলী আকবর একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাকসেনাদের আক্রমন করার উদ্দেশ্যে টনির হাটে বিশ্রামের জন্য অবস্থান নেয়। মোঃ টনি মুক্তিযোদ্ধাদের তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে গোপনে আবার সে খবর ভোলায় পাকসেনাদের জানায়। সেদিন ছিল ২৭ শে অক্টোবর, পাকবাহিনী ভোলা থেকে গিয়ে, টনির হাটে ও তার বাড়িতে আক্রমন চালায়। শুরু হয় প্রচন্ড যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাঁচ জন পাক সেনা মারা যায়।
এছাড়া- আরেকটি যুদ্ধে, বাংলাবাজারে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়।

এছাড়া- দৌলতখানের হাজিপুর গ্রামের গরুচোখা খালে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে ৮ ঘন্টা ব্যাপি এক ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পর ১১ জন পাক সৈন্য ও ১৩ জন রাজাকারকে আটক করে বাংলা স্কুল মাঠে আনা হয়।

এছাড়া- চরফ্যাশন ও লালমোহনের দেবীর চর সহ বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা ভোলার আর বেশ কয়েকটি স্থানে, চোরাগোপ্তা আক্রমন চালায়।

শেষদিকে পাকবাহিনী, কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর পাকবাহিনী তাদের দোসর-রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতাদের নিয়ে কার্গো লঞ্চ যোগে, ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। পালাবার সময় তারা ভেদুরিয়া ঘাট ও চরসামাইয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে পড়ে। ফলে দিশেহারা হয়ে, পাকসেনারা মর্টারশেল নিক্ষেপ করতে করতে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। পথে তারা রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতাদের বিভিন্ন চরে নামিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি পাকবাহিনীর। পরবর্তীতে জানা যায়, চাঁদপুরের নিকটে গেলে, মিত্রবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে তাদের কার্গো লঞ্চের উপর গোলা নিক্ষেপ করে এবং লঞ্চটি সম্পূর্ন ডুবে যায়।
পরদিন ১০ ই ডিসেম্বর ভোরে ভোলার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে, বের করে বিজয় মিছিল।

508

বধ্যভূমিঃভোলার বড় বধ্যভূমিটির অবস্থান ওয়াপদা কলোনীর পাশে। এখানে সাধারন মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে, নির্মমভাবে হত্যা করে. মাটি চাপা দেয়া হত। স্বাধীনতার পর অবশ্য ঐ জায়গাটি বেদখল ছিল। যা ২০০৭ সালে জেলা প্রশাসন কর্তৃক দখলমুক্ত করে বধ্যভূমিতে সংরক্ষন করা হয়।




U-ON
Bhola, Bangladesh
Home |
Back |
Top ^

Www.Bhola.Waphall.Com